হারানো বাতিঘর

“Where has the starlight gone?
Dark is the day
How can I find my way home?
Home is an empty dream
Lost to the night…
I know that the night must end
And that the sun will rise
And that the sun will rise…”
সেই কবে থেকে একটা ঘরের ছবি এঁকে যাচ্ছি আমি। হারানো ঘরটা এক বাতিঘরনরওয়ের ফিওর্ডে বাতিঘর। সমুদ্র ঝাঁপাচ্ছে পায়েসীগাল উড়ছে। একটা জাহাজ দূরে কখন কোথায় ভেসে গেল...কুয়াশার ভেঁপু বেজে বেজে ক্লান্ত। আর আমি পাথরে দাঁড়িয়ে জলে ঝাঁপানো সীগাল দেখে যাচ্ছি। ঠোঁট বড় বেশি ভেজা।
সুতীব্র কামনা। ম্যাগনোলিয়া ফুটেছে? প্রাগৈতিহাসিক। চোখে ছলছল জল। আমি শুধু অমৃত চেয়েছি।

মামমামইউ আর মেরী-পপিন্স!’ ‘হাহাহাহ্যাঁ রে সোনানেমেছি আকাশ থেকে। স্যাটার্নের রিঙে মুক্তা কুড়িয়েসেই তো ম্যাজিক!মেরী-পপিন্স! এই নে ট্রুফল। দেখ্‌কেমন ভরেছি চকোলেটের ভিতর টলটলে অরেঞ্জ লিকার। বানিয়েছি অর্কিডে সাজানো কেক । দুধশাদা নরম ফ্রস্টিং। উপরে ছড়ানো র‍্যাস্পবেরি।

আয়আয়কাছে আয় । আয় রেতোদের হীরার মুকুট কিনে দিই। চারদিকে ঝরছে রুপালি তারামুঠো মুঠো আলো । চল্‌সোনার মোহর ছড়াই। আমিই তো কুইন ক্লিওপেট্রা!

এবার ওদিকে তাকানদীতে প্রাসাদ। কোনো এলেবেলে ঘর নয়। ঝলমলে মিনারনীলচে আভা। বানিয়েছি লুনদের জন্য । দে-মেট-ফর-লাইফ!’ মুক্ত লুন । নদীতে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত লুন-প্রাসাদে ঘুমাবে লুন।

দেখ্‌ দেখ্‌মেঝেতে কেমন নুড়ি-পাথর ঢেলেছিহাজার হাজার। ঘরের ভিতর সমুদ্রের পাড়?
গোলাপি বুকের শঙ্খে ট্রান্সপারেন্ট সবুজলুচিপাতা গাছ। সীগাল উড়ছেকুয়াশার ভেঁপু বেজে বেজে ক্লান্ত। একটা জাহাজ দূরে কখন কোথায় ভেসে গেল...

চল্‌একসাথে গান গাই। পাফ্‌ দা ম্যাজিক ড্রাগন লিভড বাই দা সী। এন্ড ফ্রলিকড ইন দি অটTম মিস্ট ইন আ ল্যান্ড কলড্‌ হনা লী।
এই নে জন্মদিনের জামামেয়ের‍্যাগডলও দিলাম । পুতুলের গায়ে বানিয়েছি তোর মতই পোশাক।

কি বললিলাল রঙের থুবড়ে পড়া বার্নএকশ’ বছর ওখানে দাঁড়িয়ে আছেকোথায়আমি তো দেখি থোকা থোকা লাইলাক। গন্ধে দিশাহারামাতাল বেগুনি রঙ। আর সূর্যের আলোয় আমার শরীর চামড়া-মন ড্যান্ডিলিয়ান । সূর্য-হলুদ ড্যান্ডিলিয়ান।

কলম থামে নাকিছুতেই কলম থামে না। দিস্তা দিস্তা আঁকিবুকি । ইচ্ছা করে কোন গল্প কবিতাই লেখা নয়। কলম থামে নাকিছুতেই কলম থামে না। কাগজে সাপের হেঁটে চলা। একসাথে সাতটা পেন্টিং শুরু।
সবুজ জলের উপর রাজহাঁসের বাসাভেসে ভেসে...ইউফোরিয়াইউফোরিয়া...

সাগরপাড়ে আগুন জ্বেলে ঘুরে ঘুরে নাচ। তোমার আমার শিখা হয়ে যাওয়াবনফায়ার। সারা রাত খোলা মাঠে শুয়ে তারা চেনা। ওগো অরুন্ধতীতোমার শরীর চেনা ।

সূর্য চাই। আলো চাই। প্রেম চাই। স্বপ্ন চাই। স্বপ্ন চাই। প্রেম চাই। নাও নাআমাকে নাও।
কবেকার সে সন্ধ্যার কথা মনে পড়েদেয়ালে অতৃপ্ত আত্মা ঠোঁট ঘষে। হাহাকারবাতাসের শন্‌শন্।
বুক ফেটে যায়

মাথার ভিতর দ্রুত কয়েক হাজার স্বপ্ন ছুটে যাচ্ছে । কত-যে ফায়ার-ওয়ার্কস্! ঘোড়ার খুরের শব্দ তুলে সহস্র দুঃস্বপ্ন ছুটে যাচ্ছে। আমি তো কিছুই ছুঁতে পারছি না। আমি তো তোমাকে ছুঁতে পারছি না। তবে কি কুলীন বামনীর মতশুধু জীবনভর অপেক্ষা করে যাব? নিজ ঘরের চৌকাঠে বসেবহুদূরে তোমার আকাশ দেখে যাব? আমার যে ঈশ্বরও নেই!

চারপাশে নিঃশ্বাসের ফোঁস ফোঁস শব্দ। মানুষেরা অজগর। চোখে ঘুম নেইকেবল আমার চোখে ঘুম নেই। 
পিয়ানো বাজিয়ে ভোর। আভে-মারিয়া।  আমার  বেহালা দুচোখে জল ভরে কাঁদে। মুনলাইট-সোনাটা’। পারফেক্ট পীচ।

কালো মেঘ ফুঁড়ে ফুঁড়ে চোখে-মুখে কবিতার রেণু। কুচি কুচি সোনা। আচ্ছাকোথাও কি কেউ কবিতা লিখল? হায়! এ বরফে আমার চামড়া কেঁপে কেঁপে সূর্যে ডুবে গেল

মামমামইউ আর মেরী-পপিন্স!’ ‘ম্যাজিকহ্যাঁ তোএকোয়া রেজিয়া গলে দেয় সোনাগলে যাই আমি। সোনার জলের টিপ।
কিন্তু এখন তোরা যা । আবার আঁধার চারদিক। ঝরছে নক্ষত্র থেকে মুঠো মুঠো ছাই। শরীর চলছে নাপায়ের নীচে বসন্তের ফুল সব ফোটা শেষ। পাতালে পারসেফোনি । পাতালে পারসেফোনি। কালো ছাড়া রং নেই । মৃত্যু ছাড়া ছুরি নেই । গলগল রক্ত। রংধনু বেয়ে বেয়ে শুধু লাল রক্ত। তবে কি পুরোজীবন আকাশে তাকিয়ে কমলা ওরিয়লের পাউচ-নেস্টটা খুঁজে যাব? সবচেয়ে উঁচু ডালে? ঘরের দেয়ালে রংধনু এঁকে এঁকে পূর্ণিমা-চাঁদের ভয়েবলোআমি কোথায় পালাব? ছোট্ট চিকাডি পাখির মসে ঢাকা বাসা কই?

ঘর নেইকোন ঘর নেই। আমার লুনের ঘর নেইআমার হারানো বাতিঘর নেই। আমার ফিওর্ড নেইসমুদ্র-সীগাল কিছু নেই । জলের উপর ভোরের কুয়াশা নয় কেবল স্বপ্নের ধোঁয়াভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বপ্ন


আমি তো ভো-কাট্টা ঘুড়ি মুখ থুবড়েহোঁচট খেয়ে মরা গলাকাটা মুরগী।  রক্তের ফোঁটা
ঘাসে লেগে আছেসিস্টিন চ্যাপেল আমার আকাশে নেই। টানেলের শেষে আলো নেই। হায়াসিন্থ এখানে ফোটে না।

রাস্তায় মরা-হরিণ পড়ে থাকে। মৃত্যুর সবুজ আঁশ । ইজেলে গলায় দড়ি দিয়ে সাতটা পেন্টিং ঝুলে আছে।
সোণালি স্বপ্নের সূতা দিয়ে বোনা যতসব দুঃস্বপ্নের জাল । আমার মাকড়সার জাল। মাকড়সা মা-র বুক কুড়ে দুঃস্বপ্নগুলো কি স্বপ্ন হয়ে হেঁটে যাবেওর সন্তানের মতসত্যি

ঘর-সংসার আর রবিঠাকুরের মাটির শ্যামলী’ নয়। ডিজনীর সিন্ডেরেলা ক্যাসলও নয়। আমি যে বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারছি না। বালিশের পাশে কবেকার সব এঁটো থালা-বাটি । আচ্ছাআবার যেদিন সারাদিন বাসন মাজতে পারবআমাকে ভালোবাসবে তো?বলোবাসবে। অথচ জানো? পুরো জীবন বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আমি এদিকে তোমার পথের দিকেই হেঁটে চলেছি।শরীরে মধু শুকায়।জীবন এত ছোট ক্যানে?’

আত্মহত্যা পাপ নয়আত্মহত্যা পাপ নয় । শুধু এক অজানা নেশার ফুল। আত্মহত্যা পাপ নয়আত্মহত্যা পাপ নয়। শুধু এক অজানা নেশার ফুল। গলগল রক্তরংধনু বেয়ে বেয়ে শুধু লাল রক্ত।

মরণ শিকার? আমি কার মরণ শিকার? পকেটে পাথর ভরে জলে ঝাঁপ দেব? কিংবা ইন্টারস্টেটে গাড়ির হুইল থেকে হাত ছেড়ে দেব? পেটে ছুরি নিজেই বসাব? পারব না হারাকিরি? নাএমন মরণ সুন্দর নয়। অথচ কিভাবে হলুদ পাতার মত ঝরে যাব ধীরে ধীরে মাটি ছোঁবভেসে ভেসে গোল্ড-ফিঞ্চ? আস্প কইআস্প কই? আমিই যে ক্লিওপেট্রা!

আত্মহত্যা পাপ নয়আত্মহত্যা পাপ নয়। শুধু এক অজানা নেশার ফুল। আত্মহত্যা পাপ নয়আত্মহত্যা পাপ নয়। শুধু এক অজানা নেশার ফুল। গলগল রক্তরংধনু বেয়ে বেয়ে শুধু লাল রক্ত।

অথচ এমন কেন? প্রাণের কুকুরটার চোখে আমি তো সেদিন বাঁচবার আর্তি দেখেছিকেবল আর অল্প বেঁচে থাকাজিহবার উপর এক ফোঁটা জলমরে যাওয়ার আগে শেষবার শুধু বল ছুঁড়ে খেলা।
ভোরের গোলাপটার বুকে বৃষ্টিফোঁটা চিনেছি। তবে কি তোমার ঠোঁটের রঙ ভুলে যাচ্ছি?
সব শুধু কাঞ্চন-ফুলের মত প্রজাপতিটার পাখা?

দিস-ইজ-আ-টেস্টবুক-কেস-অফ-ম্যানিক-ডিপ্রেসিভ-ইলনেস্!

হালকা জলের পর্দায় আমার আত্মা কাঁপেবলেছিলে বুঝি? এই সেই চোখউদাস বিষন্ন চোখতোমার ভালোবাসার চোখ? আমার বাইপোলার চোখ। জ্যান্ত আমিবড় বেশি জ্যান্ত আমি? টগবগেঅফুরন্ত প্রাণ? আমার ম্যানিক প্রাণ।

ভ্যানগগ নইভার্জিনিয়া উলফ্-ও নই। কোনই প্রতিভা নেইশুধু অসুখ পেয়েছি? আত্মহত্যা নয়কেবল তেলাপোকার টিকে থাকা তবুও ডক্টর জন,‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। এ জন্ম-অসুখ যেন ওদের না হয়। রক্তের অসুখ যেন আমার জীবনে শেষ হয়।

ক্যানভাসের বরফ ফুঁড়ে সত্যিই কি সোনালি ফোরসিথিয়া ফুটবে না? আমার আকুল তৃষ্ণা নিয়ে এবার কোথায় যাব? মানুষের প্রেম নয়লিথিয়াম আমাকে বাঁচাবে?

একটা জাহাজ দূরে কখন কোথায় ভেসে গেল...আমি শুধু অমৃত চেয়েছি।






Comments

Popular Posts