তারাজ্বলা রাত

জীবনের পাওয়াগুলো শুধুই তারাজ্বলা রাত। কয়েক ফোঁটা চোখের জল।বুকের ভিতর চাপধরা ব্যথার বেড়ে চলা। মাঝে মাঝে কাঁসাই নদী দেখতে গিয়ে কাঁসাই নদীর মাটিটুকু দুই হাতের মুঠো দিয়ে আঁকড়ে ধরে বাকিটা জীবন ঘরে না ফিরে নদীর পাড়েই পড়ে থাকতে চাওয়া।

আর মানুষগুলো সবাই শুধু ইম্প্রেশনিস্টিক ছবি। কাছে গেলে চোখ এত জলে ভরে যায়, কিছুই আর দেখা যায় না। অথচ দূর থেকে রঙের পর রঙ। ছেঁড়া ভালোবাসা জুড়ে জুড়ে বাকিটুকু পাতাল আলোর জলে ডুবে বেঁচে থাকা।

আসলে গল্পের বই-এ যেমন পৃষ্ঠা উল্টালেই গল্প শেষ হয়ে যায়, জীবনের কোন গল্পই তো তেমন শেষ হয় না। এক নদী থেকে অন্য নদীর সাঁকোগুলোর উপর দিয়ে টলমল যেতে গিয়ে লাল, শাদা ডোরাকাটা আর ছেঁড়া গামছার পুঁটলিতে বাঁধা রঙ্গিন কাচের ভাঙ্গা টুকরোগুলো, কুড়িয়ে পাওয়া কাদামাখা নীল-ছাই দাগকাটা শামুক, বই-এর ভাঁজে শুকিয়ে বাদামি হয়ে যাওয়া দোলনচাঁপা ফুল, ‘আকাসিয়া’-র ছোট তলোয়ারের মত বাঁকানো পাতা নদীর জলে ফেলে তো আর কখনো চলে যাওয়া হয় না।

কোনদিন দুপুরবেলা ভুল করে ঘুমিয়ে পড়ে বিকেল পার করে উঠলে যেমন বোঝা যায় না সকাল না বিকেল, আলো ফুটছে না আলো নিভছে, সময়টা আজ না সময়টা কাল; ঠিক তেমনই সব অন্যমনস্ক সময়ে কাছিমের মত উপর হওয়া ভীষণ সাবধানী জীবনেরও খোলা বিঁধিয়ে মাংসের ভিতর বর্শা ঢুকে পড়ে। চেষ্টা করেও ছেলেবেলার ঘুমপাড়ানি গানের মত কিছুই ভোলা যায় না। স্বপ্নের মত, জীবনের মত সব শুধু শেষ পর্যন্ত বিষন্ন বিকেলের অসমাপ্ত কবিতা হয়ে বুকের ভাঁজে থেকে যায়। পুরাতন ঝাঁঝালো মদের মত সবটুকু প্রেম।


Comments

Popular Posts