শীত ভোরের রোদ

যে পথ সামনে এগিয়ে গেছে, সেই একই পথ ফিরে গেছে ঘরে। তবু কোনদিন আর ফেরা হয় না। পথের পাশে পড়ে থাকে হলদে রঙের সরষে ফুলের মাঠ, সরষে ফুলের উপরে মৌমাছি, সরষে ফুলের মিষ্টি গন্ধ। চোখ ধাঁধিয়ে যায়। তারপর চোখের পলক পড়ে।

নদীর জলে ভেসে যায় শীত ভোরের রোদ। খসখসে পাতার খেজুর গাছগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। সকালবেলার রসগুলো বিকেলবেলার মদ হয়ে যায়। বাকি জীবন পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে গোড়ালি উঁচু করে আর একটু লম্বা হয়ে যতই হাত বাড়িয়ে ছোঁওয়ার চেষ্টা করি না কেন, ছেলেবেলা ফিরে আসে না। কৈশর ফেরে না। যৌবন ফেরে না। কিছুই ফেরে না। নদীর যে জল যায়, সে যায়।

নদীপাড়ের হিজল গাছগুলো অর্ধেক শরীর পাড়ে আর অর্ধেক শিকড় নদীর ভিতর ছড়িয়ে দিয়ে অল্প একটু জল ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখে। হিজলের শরীর ফেলে জল চলে যায়। স্বপ্নের ভিতর শিকড় শুকায়।

যে ঘরটাতে শুয়ে আছি আজ রাতে, তার দরজাটা ভেজানো। ঘরে আলো নেই। কিন্তু ভেজানো দরজাটা দিয়ে পাশের ঘর থেকে হলদে রঙের আলো এসে এই ঘরে অল্প হলেও ঢুকছে। আর আলোর সাথে পায়ের কাছে হলদেটে খামে করে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে আমার ফেলে আসা সবগুলো জাতিস্মর জীবন। এক জন্ম থেকে অন্য জন্মে অনায়াসে ভেসে ভেসে - বাতাসের মত, মরা লাশের মত, মহাশূন্যে হারিয়ে যাওয়া ভোঁ কাট্টা ঘুড়ির মত। আমার মত।

জানালা দিয়ে অন্য দিনের মত ফটফটে জ্যোৎস্না মেঝের প্রিজমে ঠিকরে অন্য পৃথিবীতে পালিয়ে যাচ্ছে না। জানালার আলো নিভে গেছে।



Comments

Popular Posts